আমার নিউমিসম্যাটিক্স (Numismatics) সংগ্রহ-০৩: মুঘল সাম্রাজ্যের কয়েন
মুঘল সম্রাটরা ভারতীয় উপমহাদেশে ১৫২৬ থেকে ১৮৫৭ সাল পর্যন্ত প্রায় ৩০০ বছর শাসন করেন। মুঘলরা সোনা, রূপা এবং তামায় তৈরি কয়েন চালু করেছিল। সোনার কয়েনকে বলা হত মোহর। জহিরউদ্দিন মোহাম্মদ বাবর ছিলেন মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা। মুঘল সাম্রাজ্য মূলত ভারত, পাকিস্তান, আফগানিস্তান এবং বাংলাদেশ নিয়ে গঠিত ছিল।
—
ভারতীয় উপমহাদেশের একটি বিরাট অংশ জুড়ে মুঘল সাম্রাজ্য বিস্মৃত ছিল। তাদের সাম্রাজ্যের পরিধি বাংলা থেকে কাবুল এবং পশ্চিমের সিন উত্তরের কাশ্মীর এবং দক্ষিণে কাবেরী পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। সেই সময় এই বিশাল এলাকার জনসংখ্যা ছিল ১১০ থেকে ১৫০ মিলিয়ন। এই জনসংখ্যা তখনকার পৃথিবীর এক চতুর্থাংশ। মুঘল সম্রাট সাম্রাজ্যের বিস্তৃতি ছিল ৪ মিলিয়ন বর্গকিলোমিটার। ১৭শ শতাব্দীর শুরুতে, মুঘল অঞ্চলের মধ্যে অর্থনৈতিক প্রসার সবচেয়ে বিশাল ছিল এবং চীনকে ছাড়িয়ে বিশ্বের বৃহত্তম জিডিপিতে পরিণত হয়েছিল।
মুঘল যুগের মুদ্রাব্যবস্থা:
– মুঘল যুগে দুধরণের মুদ্রা প্রচলিত ছিল। রুপোর তৈরি মুদ্রা রুপি এবং স্বর্ণমুদ্রা আশরফি বা মোহর।
– রুপোর রুপি মুদ্রাগুলির ওজনের মান ও বিশুদ্ধতা একই বজায় থাকায় এই মুদ্রাই ছিল মুঘল মুদ্রা ব্যবস্থার ভিত্তি।
– স্বর্ণমুদ্রাগুলি প্রধানত মুঘল শাসক ও অভিজাতদের মধ্যেই ব্যবহার হোতো।
মুঘল যুগের মুদ্রাগুলিতে পবিত্র কোরানের কলমা ও খলিফাদের নাম খোদাই করা থাকতো।
– মুঘল মুদ্রাগুলির আকার ছিল গোলাকার, চৌকো ও সমচতুর্ভূজ আকৃতি সম্পন্ন।
১) সম্রাট বাবর ও হুমায়ুনের আমলের মুদ্রা:
—————————————-
মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা বাবর ও তাঁর পুত্র হুমায়ুনের সময়কার মুদ্রা আগ্রা, দিল্লি, লাহোর, কাবুল থেকে চালু হয়েছিল। মুদ্রাগুলি ছিল রুপোর তৈরী। এই রৌপ্যমুদ্রা-র নাম ছিল ‘শাহরুখি‘ বা ‘দিরহাম‘। মুদ্রার একপিঠে গোল আকারে লেখা থাকতো পবিত্র কোরানের কলমা।
২) সম্রাট আকবরের আমলের মুদ্রা:
—————————————-
মুঘল সম্রাট আকবর মুদ্রা ব্যবস্থার আমূল সংস্কার করেন। মুদ্রা সংস্কারের জন্য ভারতে শের শাহের কাছে আকবর অনেকাংশে ঋণী। মুঘল যুগের স্বর্ণমুদ্রার নাম ছিল ‘মোহর‘ বা ‘আশরফি‘। বিশুদ্ধ সোনার তৈরী মোহর যেমন মূল্যবান তেমনি তা ছিল মুঘল সম্রাটদের গর্ব। আকবরের স্বর্ণমুদ্রা ছিল গোলাকার, চৌকো, সমচতুর্ভূজ আকৃতি বিশিষ্ট। মুদ্রায় আরবি ভাষায় টাঁকশাল ও মুদ্রাটি প্রকাশের তারিখ দেওয়া থাকতো।
৩) সম্রাট জাহাঙ্গীরের আমলের মুদ্রা:
—————————————-
আকবরের পুত্র জাহাঙ্গীর তাঁর সৌন্দর্যপ্রিয়তার জন্য ইতিহাসে বেশ প্রশংসিত। জাহাঙ্গীরের আমলের চিত্রশিল্প ইতিহাস বিখ্যাত । জাহাঙ্গীর তাঁর মুদ্রায় সামনের দিকে পবিত্র কোরানের কলমা এবং অপরদিকে নিজের নাম খোদাই করেছিলেন।
৪) সম্রাট শাহজাহানের আমলের মুদ্রা
—————————————-
সম্রাট জাহাঙ্গীরের পুত্র শাহজাহান পৃথিবীতে বিখ্যাত হয়ে আছেন অপূর্ব শিল্প স্থাপত্যের জন্য। শাহজাহানের স্বর্ণমুদ্রায় কোরানের কলমা, টাঁকশালের নাম ও রাজার নাম ভিন্ন অন্য কোনো চিত্রের কারুকার্য অনুপস্থিত।
৫) সম্রাট আওরঙ্গজেব আমলের মুদ্রা
—————————————-
ঔরঙ্গজেবের আমলে থাট্টা থেকে ছাপা মুদ্রাগুলিতে পুরোনো পদ্ধতিকেই অনুসরণ করা হয়েছিল। নিজের শাসনকালের পঞ্চম বছরে ১৭০ গ্রেন ওজনের একটি স্বর্ণমুদ্রাতে খোদাই করেছিলেন নিজের নাম, টাঁকশালের নাম ও রাজত্বের বছর।
২০ জন মুঘল সম্রাটদের তালিকা ও বিবরণ:
১. সম্রাট জহির উদ্দিন মুহাম্মদ বাবর (১৫২৬-১৫৩০)
———-
– ভারতে মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা।
– তিনি ১৫২৬ সালে পানিপথের প্রথম যুদ্ধে সুলতান ইব্রাহিম লোদিকে পরাজিত করেন, মুঘল সাম্রাজ্যের ভিত্তি স্থাপন করেন। বাবরের প্রারম্ভিক বছরগুলি তার আত্মীয় এবং আঞ্চলিক অভিজাতদের মধ্যে ক্ষমতার জন্য সংগ্রামের দ্বারা চিহ্নিত হয়েছিল, যার ফলে ১৫০৪ সালে তার কাবুল বিজয় হয়েছিল।
২. সম্রাট নাসির উদ্দিন হুমায়ুন (১৫৩০-১৫৫৬)
———-
– বাবরের মৃত্যুর পর দ্বিতীয় মুঘল সম্রাট হিসেবে সিংহাসনে বসেন হুমায়ুন।
– ১৫৪০ সালে কনৌজের যুদ্ধে শের শাহের কাছে পরাজিত হলে তিনি দিল্লি থেকে ক্ষমতাচ্যুত হন।
– পরবর্তীতে ১৫৫৫ সালে তিনি আবারো ভারতের ক্ষমতায় আসীন হন।
– তিনি বর্তমানের পূর্ব আফগানিস্তান, বাংলাদেশ , উত্তরভারত এবং পাকিস্তান অন্তর্ভুক্ত অঞ্চলগুলির উপর শাসন করেছিলেন।
৩. সম্রাট জালাল উদ্দিন আকবর (১৫৫৬-১৬০৫)
———-
– আকবরকে মুঘল সম্রাটদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ সম্রাট হিসেবে অভিহিত করা হয়। তার আমলে মুঘল সাম্রাজ্য অনেক প্রশস্ত হয়।
– তিনি তীর্থ কর ও জিজিয়া কর রহিত করেন।
– ১৫৭৬ সালে রাজমহলের যুদ্ধে বেঙ্গল সালতানাতের বাহিনীকে চূড়ান্তভাবে পরাজিত করে বাংলায় মুঘলদের বিজয় হয়।
– উত্তরভারতে আধিপত্য অর্জনের পর, আকবর রাজপুতানার দিকে মনোনিবেশ করেন। মেওয়াত, আজমীর ও নাগর ইতিমধ্যেই মুঘলদের অধীনে চলে গিয়েছিল।
৪. সম্রাট নূরউদ্দিন মুহম্মদ জাহাঙ্গীর (১৬০৫- ১৬২৭)
———-
– সম্রাট জাহাঙ্গীরের স্ত্রীর নাম ছিল নূরজাহান।
– আকবরের পুত্র জাহাঙ্গীর মোগল সাম্রাজ্যকে উন্নতির শিখরে নিয়ে যায়। যদিও তিনি আফিমে আসক্ত ছিলেন।
– তার সময়ে বাংলার রাজধানী ঢাকায় স্থাপন করা হয় ১৬১০ সালে।
– তিনি শিল্প, সংস্কৃতি এবং তার প্রশাসনিক সংস্কারে অবদানের জন্য পরিচিত ছিলেন।
৫. সম্রাট শাহজাহান (১৬২৮-১৬৫৮)
———-
– জাহাঙ্গীরের পুত্র সম্রাট শাহজাহানের আমলে মুঘলরা অত্যন্ত জাঁকজমকপূর্ণ ও বিলাসী জীবনে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে।
– শাহজাহান ইতিহাসে বিখ্যাত হয়ে আছেন তার নির্মিত বিভিন্ন স্থাপনার জন্য।
– শাহজাহান তিনি তার মৃত স্ত্রী মমতাজ মহলের স্মরণে নির্মাণ করেন তাজমহল।
– শাহজাহানের লাল কেল্লা ও মণি-মুক্তা খচিত ময়ূর সিংহাসন জগত বিখ্যাত।
– ১৬৩০-১৬৩২ সালের দাক্ষিণাত্যের দুর্ভিক্ষটি মুঘল সম্রাট শাহজাহানের শাসনামলে ঘটেছিল।
৬. সম্রাট আলমগীর মোহাম্মদ আওরঙ্গজেব (১৬৫৮-১৭০৭)
———-
– ১৬৫৯ সালে আওরঙ্গজেব তার ভাইকে যুদ্ধে পরাজিত করেন এবং মৃত্যুদণ্ড প্রদান করেন। তাছাড়া যদিও তার পিতা শাহজাহান তখন সম্পূর্ণ সুস্থ ছিলেন, তথাপি আওরঙ্গজেব তাকে অসুস্থতার অজুহাত দেখিয়ে রাজকার্য পরিচালনা করার অযোগ্য ঘোষণা করে তাকে গৃহবন্দী করে রাখেন।
– তাঁর শাসন মুঘল সাম্রাজ্যকে উল্লেখযোগ্যভাবে সম্প্রসারিত করেছিল, এটিকে ভারতীয় ইতিহাসে বৃহত্তম এলাকা নিয়ে সম্রাজ্য বলা চলে।
– তার শাসনামলে মুঘল সাম্রাজ্য বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতি ও উৎপাদন শক্তি হিসেবে দেখা দেয়।
– আওরঙ্গজেব ধর্মপ্রাণ একজন শাসক ছিলেন যে কারণে তাকে ‘জিন্দাপীর’ বলা হয়।
৭. সম্রাট মুহাম্মদ আজম শাহ (১৭০৭)
———-
– আওরঙ্গজেবের মৃত্যুর পর তার মৃত্যুর পর তার কনিষ্ঠ পুত্র আজম শাহ এক বছরের জন্য সম্রাট ছিলেন।
– আওরঙ্গজেবের উত্তরসূরি হিসেবে মনোনীত হওয়া সত্ত্বেও, তার বড় সৎ ভাই শাহ আলমের সাথে উত্তরাধিকার বিরোধের কারণে তার রাজত্ব স্বল্পস্থায়ী ছিল।
– ২০ জুন ১৭০৭ সালে জাজাউয়ের যুদ্ধে সৎ ভাই শাহ আলমের কাছে পরাজিত এবং নিহত হন।
৮. সম্রাট বাহাদুর শাহ (১৭০৮ – ১৭১২)
———-
– জাজাউয়ের যুদ্ধে মুয়াজ্জাম আজম শাহকে পরাজিত করেন, বাহাদুর শাহ প্রথম হিসাবে সিংহাসন দাবি করেন।
– বাহাদুর শাহ প্রথম মুঘল নিয়ন্ত্রণকে একীভূত করতে চেয়েছিলেন, রাজপুত অঞ্চলগুলি যেমন অ্যাম্বারের সাথে যুক্ত করেন।
৯. সম্রাট জাহান্দার শাহ (১৭১২ – ১৯১৩)
———-
– ১৭১২ খ্রিস্টাব্দে প্রথম বাহাদুর শাহ মারা যান, তাঁর পুত্র জাহান্দর শাহ স্থলাভিষিক্ত হন।
– তার শাসনামল সামরিক এবং কূটনৈতিক উপায়ে সাম্রাজ্যকে স্থিতিশীল করার প্রচেষ্টা ছিল।
– জাহান্দার শাহের অব্যবস্থাপনা এবং তার চারপাশের রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র ব্যাপক বিশৃঙ্খলা ও অসন্তোষের জন্ম দেয়, যা তার মুঘল সম্রাজ্যের পতনের মঞ্চ তৈরি করে।
১০. সম্রাট ফররুখসিয়ার (১৭১৩ – ১৭১৯)
———-
– জাহান্দার শাহের পরাজয়ের পর, ফররুখসিয়ার সাইয়্যেদ ভাইদের সমর্থনে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন।
– ফারুখসিয়ারের শাসনামল প্রশাসনিক ও আর্থিক নীতির জন্যও উল্লেখযোগ্য ছিল, যার মধ্যে জিজিয়া পুনঃ আরোপ করা এবং ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে বাণিজ্য ছাড় দেওয়া। এই সিদ্ধান্তগুলি মুঘল শাসনের জটিল গতিশীলতাকে প্রতিফলিত করে।
১১. সম্রাট রাফি-উদ-দারজাত (১৭১৯)
———-
– একাদশ মুঘল সম্রাট এবং রফি-উশ-শানের কনিষ্ঠ পুত্র মির্জা রফি-উদ-দারাজত ১৭১৯ সালে সাইয়্যেদ ভাইদের অধীনে পুতুল শাসক হিসেবে সিংহাসনে আরোহণ করেন।
১২. সম্রাট দ্বিতীয় শাহজাহান – রাফি উদ-দৌলত (১৭১৯)
——
– দ্বিতীয় শাহজাহান ১৭১৯ সালে সংক্ষিপ্তভাবে দ্বাদশ মুঘল সম্রাটের পদে অধিষ্ঠিত হন।
– শাসন করতে তার শারীরিক ও মানসিক অক্ষমতার কারণে, সম্রাট থাকাকালীন সময়ে তিনি কোন প্রকৃত কর্তৃত্ব রাখেননি।
১৩. সম্রাট মোহাম্মদ শাহ (১৭১৯ – ১৭৪৮)
———-
– রোশন আখতার, মুহাম্মদ শাহ উপাধিতে, ২৯ সেপ্টেম্বর ১৭১৯-এ মুঘল সিংহাসনে আরোহণ করেন।
– তার সময়কালে তিনি সৈয়দ ভাতৃদ্বয় এর কাছ থেকে মুক্ত হন ও মারাঠাদের সাথে দীর্ঘ যুদ্ধে অবতীর্ণ হন। দাক্ষিণাত্য এবং মালবা হাতছাড়া হয়।
– ১৭৩৯ সালে নাদের শাহ এর আক্রমনের শিকার।
– তিনিই ছিলেন শেষ মুঘল সম্রাট যার হাতে প্রকৃতই সাম্রাজ্যের নিয়ন্ত্রণ ছিল।
১৪. সম্রাট আহমদ শাহ বাহাদুর (১৭৪৮ – ১৭৫৪)
———-
– আহমদ শাহ বাহাদুর তার পিতা মুহাম্মদ শাহের মৃত্যুর পর ১৭৪৮ সালে মুঘল সিংহাসনে আরোহণ করেন।
– তার শাসনকাল ক্রমাগত সামরিক পরাজয়, অঞ্চল হারানো এবং মুঘল সাম্রাজ্যের ক্ষয়প্রাপ্ত প্রতিপত্তি দ্বারা চিহ্নিত ছিল।
১৫. সম্রাট দ্বিতীয় আলমগীর (আজিজ-উদ-দীন) (১৭৫৪ – ১৭৫৯)
———-
– আজিজ-উদ-দীন, দ্বিতীয় আলমগীর উপাধি নিয়ে সাম্রাজ্যে আরোহন করেন।
– তাঁর শাসনকাল বহিরাগত আক্রমণ এবং অভ্যন্তরীণ কলহের মধ্যে ক্ষয়িষ্ণু মুঘল সাম্রাজ্যকে স্থিতিশীল করার প্রচেষ্টা ছিল।
১৬. সম্রাট তৃতীয় শাহজাহান (মহি উল মিল্লাত) (১৭৫৯ – ১৭৬০)
———-
– তৃতীয় শাহজাহান ছিলেন ষোড়শ মুঘল সম্রাট, যদিও তার শাসনকাল ছিল স্বল্পস্থায়ী।
– বক্সারের যুদ্ধের সময় বাংলা বিহার এবং উড়িষ্যার নিজামের জোট বদ্ধ হন।
১৭. সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলম (আলী গহর) (১৭৬০ – ১৭৮৮)
———-
– সপ্তদশ মুঘল সম্রাট শাহ আলম দ্বিতীয় (আলি গোহর), একটি ক্ষয়িষ্ণু মুঘল সাম্রাজ্যে সিংহাসনে আরোহণ করেন, তার ক্ষমতা এতটাই হ্রাস পায় যে এটি এই কথার জন্ম দেয় যে, “শাহ আলমের সাম্রাজ্য দিল্লি থেকে পালাম পর্যন্ত।
– দ্বিতীয় শাহ আলমের মুঘল কর্তৃত্ব পুনরুদ্ধার করার প্রচেষ্টা তাকে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বিরুদ্ধে ১৭৬৪ সালে বক্সারের যুদ্ধ সহ বিভিন্ন দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে, যার ফলে এলাহাবাদ চুক্তির মাধ্যমে ব্রিটিশদের অধীনে তার পরাজয় এবং পরবর্তী সুরক্ষা হয়।
১৮. সম্রাট চতুর্থ শাহজাহান (মোহাম্মদ শাহ বাহাদুর) (১৭৮৮)
———-
– মির্জা মাহমুদ শাহ বাহাদুর, শাহজাহান চতুর্থ নামে পরিচিত।
– সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলমের সিংহাসনচ্যুত হবার পর পুতুল সম্রাট হিসেবে সিংহাসনে আরোহণ করেন। তার মৃত্যু একটি সংক্ষিপ্ত এবং অশান্ত রাজত্বের সমাপ্তি ঘটে।
১৯. সম্রাট দ্বিতীয় আকবর শাহ (মির্জা আকবর) (১৮০৬ – ১৮৩৭)
———-
– তিনি ছিলেন শাহ আলম দ্বিতীয়ের দ্বিতীয় পুত্র।
– তিনি ছিলেন ব্রিটিশ পরিরক্ষণে প্রথম মুঘল সম্রাট।
– ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মাধ্যমে ভারতে ব্রিটিশ আধিপত্য বিস্তারের মধ্যে তার শাসন ক্ষমতা খুবই সীমিত ছিল।
২০. সম্রাট দ্বিতীয় বাহাদুর শাহ (মির্জা আবু জাফর সিরাজ-উদ-দীন মুহাম্মদ) (১৮৩৭ – ১৮৫৭)
———-
– তিনি ছিলেন ২০ তম ও সর্বশেষ মুঘল সম্রাট।
– তিনি ১৮৩৭ থেকে ১৮৫৭ সাল পর্যন্ত রাজত্ব করেছিলেন।
– তার শাসন মূলত নামমাত্র ছিল, প্রকৃত ক্ষমতা ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কাছেই ছিল।
– বাহাদুর শাহ সিংহাসনে আরোহণের ২০ বছর পর সূত্রপাত হয় ঐতিহাসিক সিপাহি বিদ্রোহের। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি সমগ্র ভারতবর্ষ ততদিনে দখল করে নিয়েছে।
– সিপাহি বিদ্রোহকে ভারতের প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধ, মহাবিদ্রোহ, ভারতীয় বিদ্রোহ, ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহ ও ১৮৫৮ সালের গণ-অভ্যুত্থান নামেও অভিহিত করা হয়ে থাকে। এই বিদ্রোহ দমন করা হয় নির্মমভাবে। বহু নিরপরাধ নরনারী, শিশু বৃদ্ধদের নির্বিচারে হত্যা করা হয়। ইংরেজরা অতি নির্মমভাবে বিদ্রোহ দমন করে। হাজার হাজার স্বাধীনতাকামীর রক্তে রঞ্জিত হয় ভারতবর্ষের মাটি।
– ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহের পর ব্রিটিশ শাসক কর্তৃক দ্বিতীয় বাহাদুর শাহ সিংহাসনচ্যুত এবং মিয়ানমারে নির্বাসন করা হয়। জাফর ১৯৬২ সালে নির্বাসনে মারা যান, তাকে তার জন্মভূমি থেকে দূরে রেঙ্গুনে সমাহিত করা হয়।
—
মুঘলরা আধুনিক ভারতের ভিত্তি স্থাপনে ভূমিকা রেখেছিল, ভূমি রাজস্ব ও প্রশাসনে সুদূরপ্রসারী সংস্কার প্রবর্তন করেছিল যা যুগ যুগ ধরে প্রতিধ্বনিত হয়। রাজনৈতিকভাবে, মুঘলরা একটি কেন্দ্রীভূত প্রশাসন প্রবর্তন করে যা ব্রিটিশ রাজ সহ পরবর্তী সরকারগুলির জন্য একটি মডেল হয়ে ওঠে।
—
Minhazul Asif
https://www.facebook.com/minhazulasif.codemanbd
01871993300