আমার নিউমিসম্যাটিক্স (Numismatics) সংগ্রহ-০১ ও ০২:
আমার কালেকশন থেকে নেওয়া ১৯৭২ সাল থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ এর বিভিন্ন ভেরিয়েশনের ট্রেজারী ব্যাঙ্ক নোট, স্মারক নোট ও ধাতব মুদ্রা/ কয়েন:
—
আমাদের দেশের মুদ্রার নাম টাকা। এক সময় টাকাকে বলা হতো টঙ্ক। বাংলাদেশ শত্রুমুক্ত হওয়ার পর কয়েক মাস পর্যন্ত পাকিস্তানি মুদ্রা চালু ছিল। ১৯৭২ সালের মার্চ মাসে স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম যে নোট বাতিল ঘোষণা করা হয়, সেটি পাকিস্তানি ৫০ রুপির নোট। এই নোট ব্যাংক কিংবা পোস্ট অফিসে জমা দেয়ার জন্য তিন দিন সময় বেঁধে দেয়া হয়েছিল।
![bangladesh bank notes](http://whatminhazulasifwrite.com/wp-content/uploads/2024/03/432748118_10160336607522921_6328799865657297166_n-1024x768.jpg)
—
স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ৪ মার্চ অর্থসচিব কে এ জামান স্বাক্ষরিত এক টাকার একটি নোট বের হয়। এটিই স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম নিজস্ব কাগজী মুদ্রা। এই নোটে দেখানো হয়েছে বাংলাদেশের মানচিত্র। এই নোট ছাপা হয় ইন্ডিয়ান সিকিউরিটি প্রিন্টিং প্রেসে। স্বাধীনতার পর অর্থনৈতিক পুনর্গঠনের অংশ হিসেবে দ্রুততার সাথে নোট ও ধাতব মুদ্রা চালু করা হয়। এর ডিজাইনের দায়িত্বও দেয়া হয় ভারতের এই প্রেসকে।
—
৫ ও ১০০ টাকার নোটও চালু হয় ১৯৭২ সালের ৪ মার্চ। আর ওই বছর ২ মে চালু হয় ১০ টাকা মূল্যমানের নোট। এসব নোটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি সংবলিত ছিল। দেশে প্রথম ধাতব মুদ্রা চালু হয় ১৯৭৩ সালের ১৫ জুলাই। ১ পয়সার এই মুদ্রা বিদেশ থেকে আনা হয়।
—
১৯৭৩ সালের ১৮ ডিসেম্বর বাজারে আসা মতিউল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক টাকার নোটে রয়েছে ঢেকিতে ধান ভাঙার দৃশ্য। নোটটির নকশাকার শিল্পী কে জি মুস্তফা।
—
দ্বিতীয় সিরিজে নোট মুদ্রণ করা হয় যুক্তরাজ্য থেকে যার ডিজাইন এডভাইজারি কমিটির সদস্য ছিলেন শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন, পটুয়া কামরুল হাসান, কে জি মুস্তফা, শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী ও শিক্ষাবিদ নীলিমা ইব্রাহিম।
![bangladesh coins](http://whatminhazulasifwrite.com/wp-content/uploads/2024/03/432768944_10160336609932921_6035235272713028261_n-825x1024.jpg)
![bangladesh coins](http://whatminhazulasifwrite.com/wp-content/uploads/2024/03/432773757_10160336609922921_2111983263798658130_n-251x300.jpg)
পরবর্তী সময়ে সুইজ্যারল্যান্ড, কোরিয়া, জার্মানি ও অস্ট্রেলিয়া থেকেও বাংলাদেশের নোট ছাপা হয়। এরপর জয়নুল আবেদিন ও কামরুল হাসানের পরামর্শে মুস্তাফা হাত দিলেন ১ টাকার নোট নকশায়। প্রথমে তিনি ১ টাকার দুটি নকশা করলেন। ১৯৮৮ সালে বাংলাদেশে টাকশাল স্থাপিত হয়। ওই বছরই দেশে প্রথমবারের মতো নোট ছাপানো হয়। পরে সেটা কেন্দ্রীয় ব্যাংক ইস্যু করে।
—
তবে ধাতব মুদ্রা এখনও বিদেশ থেকেই আনা হয়। তবে স্বাধীন বাংলাদেশে ২ টাকার নোট চালু হয় একটু দেরিতে। ১৯৮৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর প্রথম ২ টাকার নোট চালু হয়। এ ছাড়া ১৯৭৬ সালের ১ মার্চ ৫০ টাকার নোট চালু করা হয়। আর একই বছরের ১৫ ডিসেম্বর বাজারে ছাড়া হয় ৫০০ টাকার নোট। ২০ টাকার নোট প্রথম বাজারে আসে ১৯৭৯ সালের ২০ আগস্ট। ২০০৯ সালের ১৭ জুলাই বাজারে আসে ১ হাজার টাকার নোট। সর্বশেষ চলতি বছর অর্থাৎ ২০২০ সালের ১৭ মার্চ বাজারে আসে ২০০ টাকার নোট। ২০০০ সালে আমাদের দেশে প্রথমবারের মতো পলিমার নোট ছাড়া হয়। ১০ টাকা মূল্যমানের ব্যাংকনোট ছিলো এটি।
![bangladesh commemorative notes](http://whatminhazulasifwrite.com/wp-content/uploads/2024/03/432734849_10160336610082921_2865356645343423841_n-1024x676.jpg)
এছাড়াও বাংলাদেশ এ বিভিন্ন সময় বিভিন্ন মূল্যের(ফেস ভ্যালু) স্মারক নোট ও ছাপা হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ঘটনা, স্থান, ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা বিশেষ দিবসকে স্মরণীয় করে রাখতে কিছু প্রতীকী নোট বা মুদ্রা অবমুক্ত করে। এগুলো স্মারক নোট বা মুদ্রা হিসেবে অভিহিত। স্মারক নোটেও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের স্বাক্ষর থাকে। সাধারণ ব্যাংক নোটে ‘চাহিবামাত্র ইহার বাহককে দিতে বাধ্য থাকিবে’, লেখা থাকলেও স্মারক নোটে থাকে ‘বিনিময় যোগ্য নয়’। বর্তমানে বাংলাদেশে ২৫, ৫০, ৬০, ৭০ ও ১০০ টাকা মূল্যের বিভিন্ন স্মারক নোট রয়েছে।
—
বর্তমানে বাংলাদেশে সরকারি নোট তিনটি ১ টাকা, ২ টাকা ও ৫ টাকা এবং প্রচলিত নোট ১০, ২০, ৫০, ১০০, ৫০০, ১০০০ এবং ২০০ টাকার নোট ২০২১ সাল থেকে নিয়মিত বাজারে থাকবে। এক টাকা, দুই টাকা ও পাঁচ টাকার নোট অর্থ মন্ত্রনালয়ের আওতায়। অর্থাৎ সরকারি নোট বের করে অর্থ মন্ত্রণালয় এবং এতে থাকে অর্থসচিবের সই থাকে।
—