জনপ্রিয় কিছু ফ্রিল্যান্সিং স্কিল : যা দিয়ে মার্কেটপ্লেস এ ভালো ক্যারিয়ার তৈরী করা যায় ।
—
গত পর্বে আমরা জেনেছিলাম ফ্রিল্যান্সিং কি এবং বলেছিলাম পরবর্তী পর্বে আমরা কি কি বিষয়ে ফ্রিল্যান্সিং করতে পারে সে বিষয়ে আলোচনা করব আজকে আমরা আলোচনা করবো আমরা কোন কোন বিষয় নিয়ে ফ্রিল্যান্সিং করতে পারি ফ্রিল্যান্সিংয়ের অনেকগুলো বিষয় আছে তার মধ্যে জনপ্রিয় ছয় টি বিষয় নিয়ে আমরা আজকে কথা বলব।
—–
১. ওয়েব ডিজাইন & ডেভেলপমেন্ট
——————-
আপওয়ার্ক এর সর্বোচ্চ ইনকাম এর লিস্ট এ ওয়েব ডিজাইন / ওয়ার্ডপ্রেস ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্ট স্কিল টি আছে একদম প্রথম দিকে জনপ্রিয় ফ্রিল্যান্সিং স্কিল এর দিক থেকে ।
ঘরে বসে ওয়ার্ডপ্রেস ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্ট এর কাজ করতে পারেন ৷ প্রত্যেকটি কোম্পানির একটি ওয়েবসাইট এর প্রয়ােজন হয়। তাদের পণ্য ও সেবা গুলােকে এবং তাদের সকল ইনফরমেশন ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ক্লায়েন্টদের কাছে প্রেজেন্ট করার জন্য।
ওয়ার্ডপ্রেস এর মাধ্যমে ওয়েবসাইট খােলার খরচ কম ৷ আপনি যদি ওয়ার্ডপ্রেস এর কাজ ভালােভাবে শিখতে পারেন তাহলে এই কাজের ভালাে চাহিদা রয়েছে৷ ওয়েবসাইটের মধ্যে ওয়ার্ডপ্রেস এর প্রয়ােজনীয়তা বেশি ৷ প্রায় ৪৫৫ মিলিয়ন ওয়েবসাইট ওয়ার্ডপ্রেস দিয়ে তৈরী হয়েছে । আপনিও চাইলে এই কাজ শিখে আয় করতে পারবেন ৷ এছাড়াও শপিফাই, উইক্স, squarespace, ক্লিক ফানেল, unbounce, weebly, webflow প্লাটফর্ম গুলো ও বেশ জনপ্রিয় ওয়েব ডিজাইন এন্ড ডেভেলপমেন্ট প্লাটফর্ম । আর ওয়েব ডেভেলপমেন্ট এর জন্য লারাভেল, PHP, জাভাস্ক্রিপ্ট, রিএক্ট, নোড js এর বেশ চাহিদা । তবে আপনাকে নির্ধারণ করতে হবে আপনি কোন দিকে আগাবেন । ওয়েব ডিজাইন শিখতে ৬-৮ মাস আর ডেভেলপমেন্ট শিখতে ১-২ বছর সময় প্রয়োজন ।
—–
২. SEO (Search Engine Optimization)
——————-
ঘরে বসে SEO কাজ করে সফল হওয়া সম্ভব। একটি ওয়েবসাইটকে গুগলে অথবা অন্য সার্চ ইঞ্জিন যেমন bing, ask এ Rank করার জন্য SEO করতে হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ওয়েবসাইট মালিকেরা তাদের কাজের জন্য
এসইও এক্সপার্ট দের হায়ার করে থাকেন ৷ জনপ্রিয় ফ্রিল্যান্সিং স্কিল এর দিক থেকে SEO প্রথম দিকে রয়েছে ।
SEO ট্রাইব্যুনালের তথ্যমতে প্রতিদিন মানুষ ৫.৬ বিলিয়ন টাইমস গুগলে বিভিন্ন বিষয়ে সার্চ করে থাকে, তাদের সমস্যার সমাধানের জন্য বা বিভিন্ন বিষয় খুঁজে বের করার জন্য। তাই গুগলের Rank করার জন্য SEO এক্সপার্টদের ভালাে চাহিদা রয়েছে৷ SEO করতে হলে কিছু বিষয়ে দক্ষতা থাকতে হয়। যেমন কনটেন্ট রাইটিং, কনটেন্ট মারকেটিং, অন পেজ SEO, অফ পেজ SEO, লিংক বিল্ডিং, ফোরাম পোস্টিং, গেস্ট পোস্টিং, ব্রোকেন লিংক বিল্ড, স্কাই স্ক্রেপার টেকনিক, ইমেইল সিগনেচার লিংক বিল্ড, সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং এবং ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্ট সম্পর্কে একটি ভালাে ধারণা থাকতে হয়। আপওয়ার্ক এ seo এক্সপার্ট রা ২০-৩০ ডলার / ঘন্টা রেট এ কাজ করছে ।
—
৩. টি-শার্ট ডিজাইন
——————-
ঘরে বসে টি-শার্ট ডিজাইন করে ভাল ইনকাম করা সম্ভব৷ আপনি যদি টি-শার্ট ডিজাইন এর কাজ ভাল করতে পারেন তাহলে এটাই পেশা হিসেবে নিতে পারেন। আমরা যে টি-শার্ট গুলাে দেখি বা মার্কেটে পাই, এই টি-শার্টগুলাের ডিজাইন কেউ-না-কেউ করে থাকেন। যাদেরকে আমরা দেখতে পাই না কিন্তু তাদের কাজগুলাে দেখা যায়৷
আপনি যদি টি-শার্ট ডিজাইন এর কাজ শিখেন তাহলে এই ইন্ডাস্ট্রিতে আপনার ডিজাইন সাবমিট করে ভালাে আয় করতে পারবেন ৷ অ্যামাজন, ফাইবার, ফ্রিল্যান্সার এ ধরনের যত মার্কেটপ্লেস রয়েছে সেখানে আপনার ডিজাইন সাবমিট করতে পারেন ৷ অনেকে টি-শার্ট ডিজাইনারদের হায়ার করে থাকেন তাদের কোম্পানির টি-শার্টের ডিজাইন করে নিতে। আপনিও চাইলে টি-শার্ট ডিজাইনার হিসেবে কাজ করতে পারেন।
টি-শার্ট ডিজাইনের কনসেপ্ট ক্লিয়ার হতে পারলে সকল মার্কেটপ্লেস গুলােতে আপনিও খুব সহজে এই ফ্রিল্যান্স টি-শার্ট ডিজাইনার হিসেবে কাজ করতে পারবেন। এর জন্য আপনাকে খুব বেশি এক্সপার্ট হতে হবে না। নিজের মাথার ভিতর কিছু ক্রিয়েটিভিটি থাকলেই আপনি এই কাজটি করতে পারবেন। তার জন্য অবশ্যই আপনাকে এডোবি ইলাস্ট্রেটর সফটওয়্যারটি ভালোভাবে শিখে নিতে হবে।
—-
৪. লােগাে ডিজাইন /গ্রাফিক ডিজাইন / UI-UX/ ব্র্যান্ড ডিজাইন
——————-
বর্তমানে ডিজিটাল মার্কেটিং এর এই যুগে গ্রাফিক্স ডিজাইন ব্যাতিত পুরো মার্কেটিং ডিপার্টমেন্টই অচল। ডিজিটাল মার্কেটিং এর জন্য যা যা দরকার একটা কোম্পানির, তার বেশির ভাগই বানায় গ্রাফিক্স ডিজাইনাররা।
লোগো, ব্যানার, পোষ্টার, বিলবোর্ড, সোশ্যাল মিডিয়া কভার ফটো, টেলিভিশন কমার্শিয়াল, ইত্যাদির সবকিছুই গ্রাফিক্স ডিজাইন এর কাজের ভেতরে পড়ে।
এসব কারনেই গ্রাফিক্স ডিজাইন-এর গুরুত্ব দিনকে দিন বেড়েই চলেছে। তাই আপনি যদি আপনি যদি সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন যে গ্রাফিক্স ডিজাইন শিখবেন, তাহলে অবশ্যই এটি আপনার জীবনে নেওয়া অন্যতম একটা ফলপ্রসূ সিদ্ধান্ত হতে পারে।
UI হল যার মাধ্যমে ব্যবহারকারীদের কোন জিনিষের সাথে সংযোগ স্থাপন করা হয় । অর্থাৎ উদারহরন হিসেবে কোন ওয়েব সাইট বা এপ এ কার জন্য কোথায় কি কি থাকবে এবং কোন অপশনের ইন্টারফেস কেমন হবে ইত্যাদি ডিজাইন করা । আর UX হল কোনো পণ্যের টার্গেট কাস্টমার কারা, তারা কেন আপনার পণ্য কিনবে আর পণ্য কেনার পর সেই পণ্যের সাথে তাদের অভিজ্ঞতা কেমন ইত্যাদি বিষয় নিয়ে কাজ করাই হল UX ডিজাইন।
এছাড়াও ফ্রিল্যান্সিং এ লােগাে ডিজাইনের কাজ শিখে যে কেউ আয় করতে পারেন। আমরা যতগুলাে প্রতিষ্ঠান দেখে থাকি, প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানের লােগাে রয়েছে। প্রতিষ্ঠান ছাড়াও ইউটিউব চ্যানেল, ফেসবুক পেজ, ই-কমার্স, অনলাইন নিউজ পাের্টাল এই প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠানের লােগাে ডিজাইনের প্রয়ােজন হয়।
এইসকল লােগাে ডিজাইন করে থাকেন লােগাে ডিজাইনাররা। লােগাে ডিজাইন মার্কেটে সব সময় ডিমান্ড থাকে৷ অনলাইন ও অফলাইন সবক্ষেত্রেই লােগাে ডিজাইনারের ডিমান্ড রয়েছে। সেক্ষেত্রে আপনিও লােগাে ডিজাইনের কাজ শিখে লােগাে ডিজাইনার হিসেবে কাজ শুরু করতে পারেন।
—-
৫. ডিজিটাল মার্কেটিং
——————-
ডিজিটাল মার্কেটিং হল অনলাইন মিডিয়ার মাধ্যমে পণ্য,প্রতিষ্ঠান বা ব্র্যান্ডের প্রচারনাকে বোঝায়। ইন্টারনেট ব্যবস্থা ডিজিটাল মার্কেটিং এর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত। যেমন- গুগল, ইউটিউব, বিভিন্ন ওয়েবসাইট, ফেসবুক সহ নানান সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম।
ডিজিটাল মার্কেটিং এর মূল স্কিল/ কনটেন্ট গুলো হলো :
সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন(SEO), কনটেন্ট মার্কেটিং, সার্চ ইঞ্জিন মার্কেটিং(SEM), সোসাল মিডিয়া মার্কেটিং(SMM), ইমেইল মার্কেটিং, ওয়েব এনালাইটিক্স। ফাইভার মার্কেটপ্লেস এ ৩০,০০০+ ডিজিটাল মার্কেটিং এর স্কিল সেল করে এমন ফ্রীলান্সার রয়েছে ।
—–
৬। লিড জেনারেশন ও ডাটা এন্ট্রি
——————-
লিড জেনারেশন হল একটি তথ্য সংগ্রহ করার প্রক্রিয়া। অর্থাৎ কোন সার্ভিস বা প্রোডাক্ট প্রোমোশন বা বিক্রি করার জন্য টার্গেটেড কোম্পানি বা ব্যক্তির তথ্য সংগ্রহ করা। তথ্য গুলো সাধারণত ইমেইল, নাম, ঠিকানা, ফোন নাম্বার ইত্যাদি হয়। আপনার ইমেইল এর স্প্যাম বক্স চেক করে দেখুন অনেকগুলো অচেনা অজানা মেইল পাবেন। এই ইমেইল গুলো কালেক্ট করা, ফোন নম্বর কালেক্ট করা, বিভিন্ন কোম্পানি এর টার্গেট পিপল বের করা ও তাদের বিভিন্ন ডাটা, সোশ্যাল মিডিয়া একাউন্ট কালেক্ট করা, ওয়েব ডিরেক্টরি থেকে কোম্পানি এড্রেস ও কন্টাক্ট ইনফরমেশন স্ক্রাপ করা, বাল্ক ইমেইল SMTP সফটওয়্যার এর মাধ্যমে সেন্ড করা, ইমেইল ভ্যালিডেট করা, linkedin গ্রুপ ও পেজ মেম্বার এক্সট্র্যাক্ট করা, হলো লিড জেনারেশন এর মূল কাজ ।
এছাড়া খুব সহজেই ডাটা এন্ট্রির কাজ শিখা যায়। ডাটা এন্ট্রি কাজ শিখে যেকোন অফিশিয়াল জব খুব সহজেই পাওয়া যায়। বর্তমান সময়ে ডাটা এন্ট্রি কাজে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। যে কেউ ডাটা এন্ট্রির কাজ শিখে জব পেতে পারেন৷ ডাটা এন্ট্রির কাজ শিখতে অবশ্যই কম্পিউটারের ব্যবহার জানতে হবে এবং এ সম্পর্কে ভালাে ধারণা থাকতে হবে। ডাটা এন্ট্রি কাজের জন্য কিছু স্কিল থাকা জরুরী৷ যেমন, ইংরেজি লিখতে, অডিও শুনে লিখতে পারা ও বলতে পারা, ট্রান্সলেট করতে পারা, টাইপিং এর স্পিড থাকা, এগুলাে ডাটা এন্ট্রি কাজের সাথে সম্পকিত৷ এগুলাে জানা থাকলে ডাটা এন্ট্রি কাজ করে ভালাে ইনকাম করা সম্ভব৷
—-
আজকে এই পর্যন্তই । অন্যদিন বাকি স্কিল গুলো নিয়ে আলোচনা করবো ও প্রতিটি স্কিল নিয়ে বিস্তারিত জন্য । তবে একজন সব স্কিল এ কখনো এক্সপার্ট হতে পারে না । তাই যে কোনো ফ্রীলান্সার এর যেকোনো একটি স্কিল এ ফোকাস করে সেই বিষয়ে এক্সপার্ট হওয়া প্রয়োজন কারণ এখন মার্কেটপ্লেস এ এক্সপার্ট ফ্রীলান্সার এর সংখ্যা অনেক কম, তাই অনেক বিষয়ে ফোকাস না করে যেকোনো একটি স্কিল অনেক গভীরে এ শিখা উচিত এবং তা দিয়ে মার্কেটপ্লেস থেকে ইনকাম করার জন্য ফোকাস করা উচিত ।
Thanks, CodemanBD