মার্কেটপ্লেস বা ফ্রিল্যান্সিং সাইটগুলো মূলত বায়ার এবং ফ্রিল্যান্সারদের মধ্যে সংযোগস্থাপনকারী একটি মাধ্যম বা ওয়েবসাইট হিসেবে কাজ করে। অর্থাৎ বিভিন্ন ফ্রিল্যান্সিং সাইটগুলোতে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের বায়াররা তাদের প্রয়োজনীয় কাজটি করানোর জন্য ঐ কাজটিতে অভিজ্ঞ ও দক্ষ ফ্রিল্যান্সার খোঁজ করে থাকেন।
মার্কেটপ্লেসে আপনাকে কাজের জন্য আবেদন করতে হবে অথবা আপনাকে কাজের দক্ষতা অনুযায়ী পোর্টফোলিও/সার্ভিস সাজিয়ে রাখতে হবে।
মার্কেটপ্লেসে দুই ধরণের মানুষ থাকে। এক, যারা কাজ করবে বা স্কিল বিক্রি করবে (সেলার)। দুই, যারা আপনাকে কাজ দিবে বা যাদের কাজ আপনি করবেন(বায়ার)।
যারা আপনাকে কাজ দিবে তারা হচ্ছে আপনার ক্লায়েন্ট। মার্কেটপ্লেসে একজন ক্লায়েন্ট যখন কাজ দেয়ার জন্য আপনার সাথে যোগাযোগ করবে তখন আপনি তার সাথে কথা বলে ঠিক করে নিতে পারবেন যে কাজ টা কি এবং যে আপনার কাজের বিনিময়ে সে আপনাকে কত ডলার $ দিবে। অর্ডার কনফার্ম করার সাথে সাথে মার্কেটপ্লেসে আপনার নির্দিষ্ট পরিমাণ ডলার জমা হয়ে যাবে এবং আপনার কাজ কমপ্লিট হবার সাথে সাথেই আপনি ডলার পেয়ে যাবেন। এইখানে মার্কেটপ্লেস অবশ্য একটা ফী আপনার থেকে কেটে নিবে ।
দেশে প্রতিনিয়ত শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বাড়লেও, বাড়ছে না কর্মসংস্থান। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটাতে ও সকলের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে এ ক্ষেত্রটিতে সরকারি-বেসরকারি নানা পদক্ষেপ লক্ষ করা যায়। তাই এখন চাকরির আশায় বসে না থেকে অধিকাংশ মানুষ ফ্রিল্যান্সিং এর দিকে ঝুঁকছে।
ফ্রিল্যান্সিং এ বিপুল সুযোগ সুবিধা ও সম্ভাবনার জন্য তরুন প্রজন্মের আগ্রহ বাড়ছে এই সেক্টরটিতে। ফ্রিল্যান্সিং কাজের সাথে সম্পৃক্ত হতে চাইলে ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কিত সব খুঁটিনাটি বিষয় সম্পর্কে ধারণা থাকা জরুরী।
1.ফাইভার (Fiverr.com)
অনলাইনে জনপ্রিয় ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস গুলোর তালিকায় ফাইভার একটি। এটি ইসরায়েলের একটি কোম্পানি ২০১০ সালে এটি প্রতিষ্ঠা করে। এখানে সেলাররা নিজের সার্ভিস সম্পর্কে বিস্তারিত লিখে পোস্ট করে থাকে, যাকে ফাইভারের ভাষায় গিগ বলা হয়। এবং যারা সার্ভিস ক্রয় করে তারা গিগগুলো থেকে পছন্দের গিগ বাছাই করে ফ্রিল্যান্সারদের হায়ার করে কাজ সম্পাদন করে থাকে।
নতুনদের জন্য এটি একটি সেরা মার্কেটপ্লেস হতে পারে। ফাইভারের সেবার পারিশ্রমিক ৫ ডলার থেকে শুরু করে সহস্রাধিক মার্কিন ডলার পর্যন্ত হয়ে থাকে। ফাইভারেও অনেক সেক্টর এর উপর ফ্রিল্যান্সার রয়েছে।
2.আপওয়ার্ক (Upwork.com)
আপওয়ার্ক একটি জনপ্রিয় ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস। এর পূর্ব নাম ছিলো ওডেস্ক। ২০০৩ সালে গ্রিসের দুই বন্ধু, অডিসিয়াস সাতালস এবং স্ত্রাতিস কারামানলাকিস এটি তৈরি করে। পৃথিবীর বিভিন্ন স্থান থেকে প্রায় এক কোটির মতো ফ্রিল্যান্সার প্রতিনিয়ত এখানে কাজ করছে। এখন এই মূহুর্তেও আপওয়ার্কে চার লক্ষের উপরে কাজ রয়েছে।
আপওয়ার্ক চুক্তিবদ্ধ কাজ অফার করে। এখানে একজন ক্লায়েন্ট ও একজন ফ্রিল্যান্সার পরস্পর চুক্তি করে কাজ করে থাকেন। আপওয়ার্কে বিভিন্ন ক্যাটাগরির কাজ পাওয়া যায়।
এখানে প্রোফাইল বানিয়ে তারপর কাজের জন্য বিড করতে হয়। অনেক ফ্রিল্যান্সারদের কভার লেটার থেকে ক্লায়েন্টরা পছন্দের ফ্রিল্যান্সারদের সাথে কমিউনিকেশন করে তাদের হায়ার করে, কাজ সম্পন্ন করার পর ফ্রিল্যান্সাররা যে টাকা পেয়ে থাকেন তার ২০% আপওয়ার্ক রেখে দেয় এবং ৮০% সে ব্যক্তিকে দেয়।
4.ফ্রিল্যান্সার (Freelancer.com)
ফ্রিল্যান্সার হলো একটি বহুল সমাদৃত অনলাইন ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস। এটি অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে ২০০৯ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয়। এখানে বিশ্বের বিভিন্ন কোম্পানি থেকে প্রধানত তিন ধরনের কাজ পাওয়া যায়। এর মধ্যে আইটি ও সফটওয়্যার সম্পর্কিত কাজ ৩৪%, স্থাপত্য, ডিজাইন, ও মিডিয়া সম্পর্কিত কাজ ৩১% এবং কন্টেন্ট / লেখালেখি সম্পর্কিত কাজ ১৩%।
ফ্রিল্যান্সার ডট কমে আঠারো’শ এর বেশি ভিন্ন ভিন্ন ক্যাটাগরির জব রয়েছে। এখানেও আপওয়ার্ক এর মতো কাজে বিড করে কাজ পেতে হয়, এছাড়াও এখানে কনটেস্ট এর মাধ্যমে ও কাজ পাওয়া সম্ভব।
4.গুরু (Guru.com)
গুরু ডট কম ও একধরনের অনলাইন মার্কেটপ্লেস । এটি ফ্রিল্যান্সারদের কমিশনের ওপর কাজের অনুমোদন দিয়ে থাকে। এটি ১৯৯৮ সালে প্রতিষ্ঠা করা হলেও সার্বিকভাবে যাত্রা শুরু করে ২০০১ সালের মে মাস থেকে। এখানে নির্ধারিত মূল্যে ও ঘন্টা হিসেব করে, উভয়ভাবেই প্রজেক্ট পাওয়া যায়। এখান থেকে অর্থ উত্তোলন পদ্ধতি হলোঃ- পেপাল, পেওনিয়ার, ওয়্যার ট্রান্সফার, ইত্যাদি।
গুরু’তে ২৬২২ টির মতো সেক্টরে জব অপারচুনেটি রয়েছে। এখানে অনেক ধরনের কাজ থাকলেও সবচেয়ে ডিমান্ডিং ফ্রিল্যান্সিং এর কাজ সমূহ হচ্ছে- ডিজাইন ও আর্ট, প্রোগ্রামিং ও ডেভেলপমেন্ট এবং রাইটিং ও ট্রান্সলেশন।
5.পিপল পার আওয়ার (PeoplePerHour.com)
পিপল পার আওয়ার যুক্তরাজ্যের একটি অনলাইন প্লাটফর্ম। এটি ২০০৭ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয়। এটিও বেশ জনপ্রিয় একটি ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস। এখানে ক্লায়েন্টরা জব পোস্ট করে ও ফ্রিল্যান্সাররা আবেদন করে। ক্লায়েন্ট পছন্দমতো যেকোনো একজন ফ্রিল্যান্সারকে সিলেক্ট করে থাকেন এবং কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর এটি উভয়ের থেকে অল্প কিছু ফি নিয়ে থাকে। এটি কিছুটা আপওয়ার্কের মতো। এখানে ক্লায়েন্টের সংখ্যাই ১.২ মিলিয়ন! বিশ্বব্যাপী লক্ষ লক্ষ মানুষ এখানে প্রতিনিয়ত কাজ করে থাকে।
এখানে বিভিন্ন ক্যাটাগরির কাজ রয়েছে। যেমনঃ- টেকনোলজি এন্ড প্রোগ্রামিং, রাইটিং এন্ড ট্রান্সলেশন, ডিজাইন, ডিজিটাল মার্কেটিং, ভিডিও এন্ড ফটো,মিউজিক এন্ড অডিও, মার্কেটিং, ব্র্যান্ডিং এন্ড সেল, সোশ্যাল মিডিয়া ইত্যাদি। এই ক্যাটাগরি গুলোর আবার বিভিন্ন সাব ক্যাটাগরি রয়েছে।
পরিশেষে কিছু কথা :
স্ট্যাটিসটিক্স বলে, পার্শবর্তী দেশ ভারতের পর ফ্রীল্যানসিং এ বাংলাদেশ এর অবস্থান (ফ্রীল্যানসিং এর ইনকাম ও সংখ্যার দিক থেকে) দ্বিতীয় । ফ্রিল্যান্সারের সংখ্যা ৬ লাখ এর উপর । তৃতীয় অবস্থানে আছে ফিলিপিন ।
বাংলাদেশের ফ্রিল্যান্সাররা মূলত ওয়েব ডিজাইন, গ্রাফিক ও UI ডিজাইন, বিভিন্ন ওয়েব CMS(ওয়ার্ডপ্রেস, শপিফাই, উইক্স), ডিজিটাল মার্কেটিং, ইমেইল মার্কেটিং, লিড জেনারেশন, ডাটা এন্ট্রি , এস ই ও সেবায় পারদর্শী।
Know more about freelancing here.
Minhazul Asif
Codemanbd